Скачать с ютуб আইয়ামে জাহেলিয়া ও প্রাক ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থা в хорошем качестве

আইয়ামে জাহেলিয়া ও প্রাক ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থা

আইয়ামে জাহেলিয়া এবং প্রাক ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থা Ayam al-Jahiliyyah and Political Conditions of Pre-Islamic Arabia আইয়ামে জাহেলিয়া: সাধারণভাবে আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে মহানবি (স)-এর ইসলাম প্রচার শুরুর আগের যুগকে বোঝায়। ‘আইয়াম’ আরবি শব্দ। এর অর্থ যুগ, সময়, কাল প্রভৃতি। আর ‘জাহেলিয়া’ অর্থ অজ্ঞতা, তমসা, বর্বরতা বা কুসংস্কার। সুতরাং ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’ অর্থ অজ্ঞতার যুগ বা তমসার যুগ (Age of Ignorance)। আইয়ামে জাহেলিয়া বলতে সেই যুগকে বোঝায় যে সময় আরবে কোনো প্রকার কৃষ্টি, ধর্মগ্রন্থ বা সূক্ষ্ম কোনো ধর্মীয় অনুভূতি বা চেতনা ছিল না। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, “সাধারণত জাহেলিয়া শব্দটি দিয়ে অজ্ঞতা বা বর্বরতার যুগকে বোঝায়, কিন্তু বাস্তবে এ শব্দটি এমন একটি সময়কে বোঝায় যখন আরবে কোনো বিধিবিধান ছিল না, কোনো অনুপ্রাণিত ধর্মপ্রচারক ছিল না, ছিল না প্রত্যাদেশ হিসেবে আসা কোনো ধর্মগ্রন্থ।' ঐতিহাসিক জে ওয়েলহাউসেন জাহেলিয়া যুগের আরবদের সম্পর্কে বলেন, “আরবদের ধর্ম ও রাজনৈতিক জীবন আদিম অবস্থায় ছিল । সুস্থ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবন সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ ছিল । তাদের সমাজ ও ধর্মীয় অবস্থা অধঃপতনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিল ।” মূলত খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে ইসলামের আবির্ভাবের আগে যখন আরব উপদ্বীপে আইন-কানুন, নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বুদ্ধিবৃত্তি, মানবতাবোধ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসহ আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য বিরাজ করত সেই সময়কে ‘আইয়ামে জাহেলিয়া' বলা হয়। তবে হিট্টির মতে, আইয়ামে জাহেলিয়ার এ সংজ্ঞা সমগ্র আরব উপদ্বীপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না। কেননা ঐ সময় দক্ষিণ আরব একটি শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমান সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছিল । এ সংজ্ঞা শুধু হেজাজ, নজদ ও নুফুদ এলাকার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । আরব উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পি. কে. হিট্টির প্রদত্ত মতামত গ্রহণ করাই অধিকতর ইতিহাসসম্মত। পবিত্র কুরআনে কয়েকবার (৩:১৪৮, ৫:৫৫, ৩৩:৩৩, ৪৮:২৬) আইয়ামে জাহেলিয়া সম্পর্কে উল্লেখ আছে। কিন্তু গোটা আরব উপদ্বীপে এর বিস্তৃতি ছিল কি না, সেখানে তা জানা যায় না । আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়কাল: আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টির পর থেকে শুরু করে মহানবি (স)-এর নবুয়তপ্রাপ্তি পর্যন্ত এ সুদীর্ঘ সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়া বলে । আরব ঐতিহাসিকদের মতে, হযরত ঈসা (আ)-তিরোধানের পর থেকে ইসলামের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা হয় । ইউরোপীয় ঐতিহাসিক আর. এ. নিকলসন ইসলামের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী এক শতাব্দী সময়কে আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়সীমা বলে উল্লেখ করেছেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি তার এ অভিমতকে সমর্থন করে বলেন, “জাহেলিয়া যুগ একদিক থেকে আদমের (আ) সৃষ্টি থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (স)-এর নবুয়তপ্রাপ্তি পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। তবে বিশেষ করে এখানে এটি ইসলামের আবির্ভাবের অব্যবহিত আগের (৫১০-৬১০ খ্রি.) একশ বছর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।' নিকলসন ও হিট্টির এ মতটিই আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়সীমা সম্পর্কে অধিকতর গ্রহণযোগ্য । ইসলামের আবির্ভাবের অব্যবহিত আগের সময়কেই যে আইয়ামে জাহেলিয়া বলা যায় পবিত্র কুরআনেও তার ইঙ্গিত মেলে । সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছে, “তোমরা একটি ভীষণ অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তসীমায় অবস্থান করছিলে ।” (আয়াত ১০৩) সুতরাং ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কুরআনের প্রমাণ সাপেক্ষে আইয়ামে জাহেরিয়াকে একটি বর্বর, বিশৃঙ্খল, নীতি নৈতিকাহীন সময় হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। আর হযরত মুহাম্মদ (স) এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটে এবং আরবে একটি সভ্য, সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ সমাজের সূচনা হয় । প্রাক-ইসলামি আরবের রাজনৈতিক অবস্থা প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও নৈরাশ্যজনক ছিল। উত্তরে বাইজান্টাইন এবং দক্ষিণে পারসিক সাসানীয় শাসিত কিছু অঞ্চল ছাড়া সমগ্র আরব উপদ্বীপ ছিল স্বাধীন। তবে সেখানে কোনো কেন্দ্ৰীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ ছিল না। শহরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলেও মরুবাসী বেদুইনদের রাজনৈতিক জীবন মোটেই শান্তিপূর্ণ ছিল না । গোত্রীয় শাসনব্যবস্থা: প্রাক-ইসলামি আরবে কেন্দ্রীয় কোনো শাসনব্যবস্থা ছিল না। তাই আরবরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে গোত্রীয় শাসনব্যবস্থা চালু করেছিল। এসব গোত্রের মধ্যে ছিল বনু বকর, বনু তাঘলিব প্রভৃতি। আরবের ভূ- প্রকৃতির তারতম্যের কারণে এর অধিবাসীদের প্রধানত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা: শহরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং মরুবাসী যাযাবর বেদুইন। শহরবাসী আরবদের রাজনৈতিক অবস্থা কিছুটা ভালো থাকলেও মরুবাসী আরবদের ক্ষেত্রে তা ছিল অরাজকতাপূর্ণ। তবে আরবরা নিজ নিজ গোত্রের নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল এবং গোত্রীয় নিয়মেই তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো । তাদের সমাজজীবনেও গোত্র ছিল বিভিন্ন বিপদাপদে রক্ষাকবচ। গোত্রপ্রীতি: গোত্রপ্রীতি ছিল বেদুইন আরবদের মূল প্রেরণা। এই প্রেরণার মূল কথা হলো গোত্রের অন্য সদস্যদের প্রতি সীমাহীন ও নিঃস্বার্থ আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ। পি. কে. হিট্টির মতে, “এ সময় সদস্যদের ওপর গোত্রের দাবি এতই প্রবল ছিল যে, গোত্রের প্রয়োজনে কোনো স্বামী তার স্ত্রীকেও ত্যাগ করতে পারত।” গোত্রের প্রতি আরবদের এ অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আনুগত্যকে ‘আসাবিয়া’ বা গোত্রীয় সংহতি বলা হয় । গোত্রীয় সংঘাত: প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে পানির নহর, গবাদি পশু, তৃণভূমি, ঘোড়দৌড় প্রভৃতি বিষয়সহ কিছু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরে চলত। একটি উটকে প্রহার করার ঘটনা নিয়ে বনু বকর ও বনু তাঘলিবের মধ্যে সংঘটিত ‘বাসুসের যুদ্ধ’ দীর্ঘ চল্লিশ বছর স্থায়ী হয়েছিল।